♦মিজানুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, কোনো সড়ক বা মহাসড়কের ৬০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে আইন মানা হচ্ছে না বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা – জয়পুরহাট সড়কে কিচক বন্দরে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে শতাধিকেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে এবং মহাসড়কের ওপর চলে আলু বেচাকেনা। ফলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বগুড়া- জয়পুরহাট সড়কের কিচক বন্দরের মূল সড়কটির দুই পাশে সওজের জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন ধরেই গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা ও অস্থায়ী দোকান। এসব দোকানদাররা পণ্যের পসরা রাস্তার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত করায় যান চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রিত পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় যানজট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এক সময় এই অবৈধ স্থাপনা গুলো অপসারণ করা হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী অল্প কিছু টাকা খরচ করে সওজর জায়গায় অবৈধ এসব স্থাপনা গড়ে তুলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এখন সেসব নেতা এখন পালিয়ে থাকলেও অন্যের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছে তারা।
একাধিক দোকান মালিক বলেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভাড়া আদায়ের নামে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবি দ্রুত গড়ে উঠা অবৈধ দোকানগুলো সড়কের জায়গার ওপর থেকে উচ্ছেদ করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মুত্তালিব, সেকেন্দার রহমান, হুমায়ুন কবির, দুলাল বলেন প্রভাব খাটিয়ে সড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ দোকানপাট। ফলে দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের” প্রায় প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মমতাজুর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক, কিচক আইডিয়াল একাডেমি স্কুলের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন তীব্র যানজটে আমাদের স্কুলের যানবাহন আটকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে অনেক সময় ক্লাস শুরু হওয়ার পর স্কুলে আসে শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজর এক দোকানদার বলেন, সওজর জায়গায় দোকান দিতে প্রথমে আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের সওজের জমি দখল ম্যানেজ করতে হয়েছে। এর সাথে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যাক্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছোট দোকানি বলেন,সরকারি জায়গায় দোকান বসাতে নেতাদের অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপর প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিলসহ দোকান ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। আমার মতো অন্যান্য যেকোনো দোকান মালিককে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। নতুবা কিচক বন্দরে ব্যবসা করা যাবে না।
কিচক ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন আলী বলেন, কিচক বাজার যানজটের অন্যতম কারণ হলো রাস্তার দুই পার্শ্বে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানে হাট বাজার বসাতে হবে।প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগীবাহি এ্যাম্বোলেন্স এবং কর্মজীবী যাত্রীরা।আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুত এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে যানজট মুক্ত কিচক বাজার চাই।
কিচক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান এবং তার সহযোগিরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই অবৈধ দোকানপাট বসিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এগুলো উচ্ছেদের।
কিচক হাটের ইজারাদার খালিদ হাসান আরমান বলেন আমি কিছু পূর্বে হাট বুঝিয়ে নিয়েছে। এই অবৈধ দোকানপাটের ফলে এই বন্দরে সবসময় জ্যাম লেগেই থাকে। আমি এ ব্যাপের ইউএনও মহোদয় অবগত করেছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমি তা পালন করবো।
এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মীর শাহে আলম বলেন সড়কে জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মানের ফলে এখানে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে এমন খবর আমার কানে এসেছে। আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের তদন্ত করে অতিদ্রত এ অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন আমার কাছে এবিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছে। রাস্তার পাশে অবৈধ দোকানপাট নির্মান করলে তা উচ্ছেদে করা হবে।
এ বিষয়ে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের ( সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মুনছুর বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
তদন্ত বাংলা মিডিয়া লিমিটেড,কপিরাইট © তদন্ত প্রতিদিন - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply