♦মো: নাজমুস ছাকিব,রংপুরঃ-
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে ১১ মার্চ ১৯৮২ এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। এদিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের চারজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী— শহীদ সাব্বির, শহীদ আব্দুল হামিদ, শহীদ আয়ুব ও শহীদ আব্দুল জব্বার— ইসলামী আদর্শের প্রতি তাঁদের অটল অবস্থানের কারণে নির্মমভাবে শহীদ হন। প্রতিপক্ষ চক্রান্তকারী শক্তির সন্ত্রাসী হামলায় তাঁদের রক্তে রঞ্জিত হয় শিক্ষাঙ্গন।
এই শহীদরা ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক, ইসলামী আন্দোলনের অগ্রদূত। তাঁদের আত্মত্যাগ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংগঠনিক ভিত্তিকে আরও মজবুত করেছে এবং আদর্শিক সংগ্রামে নতুন শক্তির সঞ্চার করেছে।
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত চলছিল। ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনে কাজ করছিল, যা অনেকেই মেনে নিতে পারছিল না।
শিবিরের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও ইসলামী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে একদল উগ্র প্রতিপক্ষ নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চরম পথ বেছে নেয়—শিবিরের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁদের নির্মূল করার ষড়যন্ত্র করে। ১১ মার্চ ১৯৮২ সেই ষড়যন্ত্রের নির্মম বাস্তবায়ন ঘটে।
সেদিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তাঁদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা শিক্ষা, নৈতিকতা ও ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রচারে অবিচল ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই পূর্বপরিকল্পিতভাবে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
লোহার রড, লাঠি, ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এই বর্বরোচিত আক্রমণ করা হয়। শহীদ সাব্বির, শহীদ আব্দুল হামিদ, শহীদ আয়ুব ও শহীদ আব্দুল জব্বারের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তাঁদের রক্তাক্ত দেহ নিথর হয়ে পড়ে, আর এভাবেই তাঁরা শহীদ হয়ে যান।
1.শহীদ সাব্বির: ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নিষ্ঠাবান কর্মী, যিনি.সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। 2. শহীদ আব্দুল হামিদ: ন্যায়ের জন্য লড়াই করা এক অকুতোভয় সৈনিক, যিনি ইসলামী আন্দোলনের অগ্রগামী কর্মী ছিলেন। 3. শহীদ আয়ুব: তরুণদের ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অনন্য সংগঠক। 4. শহীদ আব্দুল জব্বার: সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল এক সংগ্রামী, যিনি ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন।
শহীদদের এই আত্মত্যাগ ইসলামী ছাত্রশিবিরের জন্য এক অবিস্মরণীয় শিক্ষা হয়ে রয়েছে। তাঁদের স্মরণে প্রতি বছর ১১ মার্চ ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা এবং রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। তাঁদের দেখানো পথেই আমরা এগিয়ে যাব। সত্য, ন্যায় ও ইসলামের বিজয়ের জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।”
১৯৮২ সালের ১১ মার্চের শহীদরা ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির আরও শক্তিশালী হয়েছে, আরও সুসংগঠিত হয়েছে। তাঁদের আত্মত্যাগ প্রমাণ করেছে— সত্যের পথে অবিচল থাকা যায়, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা যায় না।
আল্লাহ শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।
তদন্ত বাংলা মিডিয়া লিমিটেড,কপিরাইট © তদন্ত প্রতিদিন - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply