♦মিজানুর রহমান জেলা প্রতিনিধি (বগুড়া):-
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার আর সেবার মানসিকতায় পাল্টে গেছে এক সময়ের দালালের দৌরাত্মে ভরা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারখানা কিচক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চিত্র। ভূমি অফিস মানেই দিনের পর দিন হয়রানি, অতিরিক্ত টাকা আদায় ও দালালের চক্রের দৌরাত্ম ভূমি অফিসের সেবাগ্রহীতাদের নেতিবাচক এসব ধারণা পাল্টে দিয়েছেন একজন উপ সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তা।
বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১মাস পূর্বে কিচক ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মোছাঃ রানু পারভীন । তিনি যোগদানের পর থেকেই কৗশলে ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করে ভূমি সেবা গতিশীল করে তুলেছেন। এরমধ্যে “ কয়েক দিনের মধ্যে নামজারি” ভূমি সেবায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। নিয়মিত নামজারির আবেদন নিস্পত্তি ও দৈনন্দিন অফিসের অন্যান্য কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি ইতোমধ্যে কোন ভোগান্তি ছাড়া খুব দ্রুত নামজারি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান ।
অফিসে জনবল সংকট থাকা সত্বেও কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য তিনি নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা, অনিয়ম কিংবা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পরা কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। যে কারনে কিচক ভূমি অফিস এখন আর নয় হয়রানির স্থান, বরং সেবা প্রত্যাশীদের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কিচক ইউনিয়ন ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তা মোছাঃ রানু পারভীন ।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপ-সহকারী কর্মকর্তা রানু পারভীন যোগদানের পর পরই ইতোমধ্যে একজন অফিস সহায়ককে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, অভিনব কৌশলে এ যাবত বেশ কয়েকজন দালাল অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারখানা ছিল এই অফিস। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি নামজারির আবেদন করার পর কাগজপত্রের মিল না থাকায় সে গুলে বাতিল করা হয়েছে। নামজারিতে কোন সেবাগ্রহিতার কাছ থেকে অফিসের কেউকে টাকা দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভূমি সেবা নিতে আসা কিচক ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, নামজারির জন্য ভুল বুঝিয়ে এক দালাল আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েও কাজ করতে পারছিলোনা। কিচক ভূমি অফিসে কোন টাকা লাগেনা জানতে পেয়ে এক দালাল এর কাছ থেকে টাকা ফিরত নেই। বিষয়টি আমি কিচক উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রানু পারভীন কে জানানোর পর দ্রুত নামজারি সম্পন্ন করে দিয়েছেন। সরকারি খরচ ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা লাগেনি।
ভূমি সেবা নিতে আসা একাধিক সেবাগ্রাহক বলেন, পূর্বে ভূমি সেবা নিতে আসলেই কিচক ভূমি অফিসে দালালদের আনাগোনা দেখা যেতো। এখন আর সেই চিত্র নেই। এখন আমরা নিজেরাই সরাসরি ভুমি কর্মকর্তা সাথে কথা বলে দ্রুত সব কাজের সমাধান পাচ্ছি। এতে ভূমি সেবাগ্রহিতাদের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে।অপরদিকে কিচক ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারীর এমন পদক্ষেপে ভূমি সেবা প্রত্যাশীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসলেও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়কারী অতীতের ভূমি অফিস কেন্দ্রীক দালাল চক্র ও এক শ্রেণীর অসাধু দলিল লেখক মহুরিদের মধ্যে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, অফিস সহকারীর পদ থাকলেও এখানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন একজন আয়া ,একজন অফিস সহায়কের পদ থাকলেও এ পদটি পুরোপুরি শূন্য রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে কিচক ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা সময় এক শ্রেণির দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীরা একেকটা নামজারির জন্য পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা বা অনেকক্ষেত্রে আরো বেশি টাকা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো। কাগজপত্র সঠিক থাকার পরেও অফিসে টাকা দেওয়ার অজুহাতে এসব টাকা নেওয়া হতো।
নতুন এই ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন বাসী কে জনসচেতনতা করার উদ্দেশ্যে তিনি এই ভূমি অফিসে যোগদান করার পর পরই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে তার একটি ভিডিও বার্তা আমাদের নজরে এসেছে। ভিডিওতে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, আমার এই অফিসে জমির খাজনা খারিজ (নামজারি) সহ কোন সেবা নিতে কোন টাকা লাগেনা। নিজের কাজ নিজেই নিয়ে আসবেন।আমার এই অফিস সম্পূর্ণ ঘুষ ও দালালমুক্ত, এমন ঘোষনা পাওয়ার পর থেকেই সেবাগ্রহীতারা সরাসরি অফিসমুখী হয়েছে।অফিসের কোন কর্মচারী অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পরলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা আমাদের চোখে পড়েছে।
কিচক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে কোন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা যদি গর্ব করে দুর্নীতি মুক্ত হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারেন তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বর্তমানের কিচক ভূমি অফিস। তিনি আরও বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
হাজিপুর গ্রামের নাইমুর রহমান বলেন, বর্তমান এই ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার আগে এই অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন সেবাই মিলতো না। তিনি এই অফিস থেকে চলে গেলে আগের অবস্থা ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে।
জাঙ্গালপার গ্রামের মজনু মিয়া বলেন,উপজেলা ভূমি অফিস সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আনাচে কানাচে ছড়ানো ছিটানো আছে। কিছু দলিল লেখক, ভূমি দালালদের খপ্পরে পরে সরকারি নির্ধারিত তিন গুণ টাকা নিয়ে জমির খাজনা খারিজ করে দেয়। শুনলাম কিচক ভূমি অফিসে এখন কোন ঘুষ লাগেনা।
কিচক ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাব্বিন হোসেন বলেন,আমি একটা জমির খাজনা খারিজ বাবদে ভূমি অফিসে গেছিলাম,উপসহকারী কর্মকর্তা সেবা গ্রহনকারীদের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলছেন এবং কাগজপত্র দেখে দেখে নামজারি করার সহায়তা করছেন, আগে যে ব্যাক্তি অফিসে গেছেন তার কাজ আগে করছেন। অতিরিক্ত কোন টাকা লাগছে না।এখানে কিছু স্বার্থান্বেষী দালালদের দৌরাত্ম্যে ছিল কিন্ত বর্তমানে নাই বললেই চলে তারা বিভিন্ন ভাবে দালালী কর্যক্রম চলমান রাখতে উঠে পরে লেগেছে।এই দালালদের কে দমন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তদন্ত বাংলা মিডিয়া লিমিটেড,কপিরাইট © তদন্ত প্রতিদিন - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply